রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশু পূত্রকে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়েছে পাষণ্ড সৎ মা

আনোয়ার হোসেন মানিক,প্রধান প্রতিবেদক (ক্রাইম)


লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে শিশু পূত্রকে লাথি মেরে হত্যা করে বসতঘরে মাটিচাপা দিয়েছে পাষণ্ড এক সৎ মা।

২৮ আগষ্ট (সোমবার) এ ঘটনায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ায় সৎ মা কোহিনূর বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে,গত শুক্রবার (২৬ আগষ্ট) ঘাতক সৎ মা কোহিনূর বেগম তার স্বামী হাজীগঞ্জ উপজেলার শাহ মিরনের প্রথম ঘরের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের দরবেশপুর গ্রামে বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করার পর সৎ ছেলে আহম্মদ (৩)কে শুক্রবার (যে কোন) সময়ে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের  আলামত বিনষ্ট করতে সৎ মা কোহিনূর শিশুটির মৃতদেহ বসতঘরের খাটের নিচে মাটিতে পুঁতে রাখে।পরে সৎ মা কোহিনূর হাজীগঞ্জের ভাড়া বাসায় চলে আসে।

অপরদিকে শনিবার (২৭ আগষ্ট) থেকে শিশু আহম্মদ নিখোঁজ হয়েছেন বলে এলাকার মানুষজনের মাঝে ছড়িয়ে দেন সৎ মা কোহিনূর।পরে চাঁদপুরের ডুবরি দলকে খবর দিয়ে এলাকার কয়েকটি পুকুরে শিশুটির সন্ধানে নামানো হয়। কিন্ত তারা শিশুটির হদিস পায়নি।শিশু আহমেদের খোঁজ না পেয়ে  শিশুর পিতা শাহ মিরন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সৎ মা ও সৎ নানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  হেফাজতে নিয়ে আসে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।এরপর শিশুটিকে উদ্ধারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।পুলিশ বিভিন্ন সূত্রধরে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে  হত্যার মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে।পুলিশের
জিজ্ঞেসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটিকে লাথি মেরে হত্যার দায় শিকার করে ঘাতক সৎ মা কোহিনূর বেগম।পরে আইনিকার্য শেষে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট ঘাতক মা কোহিনূরকে হস্তান্তর করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ।

এরপর লক্ষীপুর জেলা পুলিশের( রামগঞ্জ) সার্কেল শেখ সাদীর নেতৃত্বে থানা পুলিশ সৎ মা কোহিনূর বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বসতঘরের খাটের নিচে মাটিতে পুঁতে রাখা শিশু আহম্মদের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পিতার নিকট আহম্মদের মরদেহ আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুর সৎ মাকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সৎ নানীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে রামগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শিশু আহম্মদ এর পিতা হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের জিয়ানগর গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির হাফেজ শাহ মিরন, তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রামগঞ্জ উপজেলার ৭নং উত্তর দরবেশপুর ইউনিয়নের দরবেশপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির কোহিনূর বেগমকে। কোহিনূর বেগমও তার আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে হাফেজ শাহ মিরনের সাথে পারিবারিক ভাবে দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয়।

হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, জিজ্ঞেসাবাদের পর সৎ মা হত্যার দায় শিকার করায় রামগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সৎ মা কোহিনূর বেগমকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লক্ষীপুর জেলার (রামগঞ্জ সার্কেল) অফিসার শেখ সাদী ক্রাইম রিপোর্টকে  বলেন, আমরা শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছি। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির পিতার নিকট লাশ হস্তান্তর করা হবে। সেই সাথে ঘাতককে আটক দেখানো হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটিও আমরা তদন্তের খতিয়ে দেখছি।আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

Comments are closed.

More News Of This Category